ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১১/০৯/২০২৪ ১০:২৩ এএম

রাখাইনে সহিংসতা থেমে নেই। বন্ধ হচ্ছে না বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গার স্রোতও। নাফ নদ সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল থাকলেও উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত। ১০০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে অর্ধেক উপকূলীয়। রোহিঙ্গারা এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। উপকূলেও দৃশ্যমান টহল নেই। ফলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের খুরের মুখ থেকে শিলখালী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। নৌ পুলিশ-থানা পুলিশ মাঠে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠছে স্থানীয় দালালরা।
সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এত বড় সীমান্ত আসলে পুঙ্খানুপুঙ্খ টহল দেওয়া কঠিন। তার ওপর টাকার বিনিময়ে স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। বর্তমানে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি যাচ্ছে। তবে আমরা সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করেছি।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দালালদের তালিকা তৈরি করে তাদের ধরছি। আজকেও (মঙ্গলবার) ১০ জন দালাল আটক করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নাফ নদে টহলে কড়াকড়ি করেছি। উপকূল এলাকায়ও টহল জোরদার করব।’
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অপ্রতুল। তাই সুযোগ বুঝে স্থল ও জলপথ দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। রাতের আঁধারে সাঁতরেও তারা বাংলাদেশে আসছে। তবে এটাও সত্য যে, বেশির ভাগই দালালদের মাধ্যমে এপারে ঢুকছে।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, দালালরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নৌকায় রোহিঙ্গাদের এপারে জলসীমায় নিয়ে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল নেই এমন জায়গায় তাদের নামিয়ে দেয়। এর পর তীরে ঝাউবনে লুকিয়ে রাখে। সেখান থেকে গন্তব্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়। দালালদের সঙ্গে কিছু মাছ ধরার নৌকাও জড়িত রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের এ দেশে নিয়ে আসে। এ কাজে যুক্ত রোহিঙ্গাসহ বেশ কিছু দালাল সক্রিয় রয়েছে।
হ্নীলা সীমান্তের বাসিন্দা হুমায়ুন রশিদ জানান, সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয়দেরও রোহিঙ্গা ঠেকাতে সোচ্চার হতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় তারা খুব সহজে ঢুকে পড়ছে।
তিনি বলেন, টেকনাফে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বহু গুণ। ফলে স্থানীয় মানুষের বেকারত্ব বাড়ছে। ফলে অনেকে নিরুপায় হয়ে মানব পাচার, মাদক ও অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

টেকনাফের ব্যবসায়ী জেড করিম জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অনেকটা অরক্ষিত হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। তার ওপর দেশের কথা চিন্তা না করে অর্থের লোভে রোহিঙ্গা ঢোকাচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, বিজিবি-কোস্টগার্ডের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা পারাপারে জড়িত দালালদের ধরতে অভিযান চলছে। নাফ নদের পাশাপাশি উপকূলেও টহল জোরদার করা হবে।’
জানতে চাইলে বিজিবির সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী ৪ হাজার ৫০৬ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিজিবির অভিযানে মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৩ জন চোরাচালানি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১২৫ জন বাংলাদেশিকে আটক করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সঠিক তথ্যসেবার বিকল্প নেই

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সাংবাদিকরা তথ্যসেবার মাধ্যমে রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিশেষ করে ...

উখিয়ায় রেস্টুরেন্টের স্ক্রিনে নি’ষি’দ্ধ ‘ছা’ত্রলী’গের ফেরার বার্তা!

কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালী এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে ‘ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে’। মঙ্গলবার ...